মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক
(পরিবেশ ও ভূগোল) PART-I
Class 9 WBBSE Board
প্রশ্নপত্র ঃ
সমাধান ঃ
১। ‘সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের মধ্যে একমাত্র পৃথিবীই জীবকুলের আবাসস্থল’ — বক্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।
উত্তরঃ
সৌরজগতে পৃথিবী ছাড়া আর অন্য কোনো গ্রহে জীবন বিকাশের অনুকূল পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। পৃথিবীতেই একমাত্র জীবনের অপরিহার্য বিষয় – জল, অক্সিজেন, সূর্য থেকে পরিমিত দূরত্বে অবস্থান বিষয়গুলি বর্তমান আছে।
সৌরজগতে একমাত্র পৃথিবীতে জীবের আবাসস্থল হওয়ার কারণ –
💦পৃথিবীর অবস্থানঃ পৃথিবী সূর্য থেকে একটি নিরাপদ দূরত্বে(সূর্য-পৃথিবীর দুরত্বঃ প্রায় ১৫ কোটি কিমি. ) অবস্থান করছে, যা সূর্য থেকে খুব কাছেও নয় আবার খুব বেশি দুরেও নয়।
💦পৃথিবীর পরিমিত উত্তাপঃ পৃথিবী সূর্য থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার কারণে পৃথিবীর গড় উষ্ণতা ৮-২০ ডিগ্রি সে:. থাকে যা মানুষ তথা সমগ্র জীবের বেঁচে থাকার পক্ষে অনুকূল।
💦পৃথিবীর গতিঃ পৃথিবীর আবর্তন ও পরিক্রমন গতির জন্য দিন-রাত্রি ও ঋতু পরিবর্তন ঘটছে। এর ফলে মানুষের থাকার পরিবেশ, চাষ আবাদ ও অন্যান্য কাজকর্মের উপযোগী পরিবেশ গড়ে উঠেছে।
💦পৃথিবীর ভর ও অভিকর্ষ বলঃ পৃথিবীর ভর ও অভিকর্ষ বলের কারণে পৃথিবীতে মানুষ, জীব, উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন গ্যাসগুলি পৃথিবীকে আবরন করে রেখেছে।
💦জলের অস্তিত্বঃ একমাত্র পৃথিবীতে জলের অস্তিত্ব আছে ও এখানে বারিচক্র (Hydrological Cycle) সংগঠিত হয়। যা জীবন ধারনের প্রধান শর্ত।
২। প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তির মধ্যে পার্থক্য নিরুপণ করো।
উত্তরঃ
প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তির মধ্যে পার্থক্যঃ
💦সংজ্ঞাঃ যে সমস্ত শক্তি আধুনিক সভ্যতায় সবচেয়ে বেশী ব্যবহার করা হয়, তাদের প্রচলিত শক্তি বলে। যেমন- তাপ বিদ্যুৎ, জল বিদ্যুৎ, পারমানবিক বিদ্যুৎ ইত্যাদি।
অপরদিকে, যে সমস্ত শক্তির ব্যবহার কম তাদের অপ্রচলিত শক্তি বলে। যেমন- সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জৈবশক্তি ইত্যাদি।
💦উৎসঃ সমস্ত খনিজ সম্পদ হল প্রচলিত শক্তির প্রধান উৎস। যেমন- খনিজ তেল, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম ইত্যাদি।
অপরদিকে, প্রকৃতির অফুরন্ত প্রবহমান শক্তিই হল অপ্রচলিত শক্তির প্রধান উৎস।যেমন- বায়ুপ্রবাহ, সূর্যের তাপ, জোয়ার ভাটা, সমুদ্রতরঙ্গ ইত্যাদি।
💦 দূষণঃ জলবিদ্যুৎ ছাড়া অন্যান্য প্রচলিত শক্তির দ্বারা পরিবেশ দূষিত হয়। যেমন- তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রচলিত শক্তি কয়লার দহনে প্রচুর পরিমানে ধোঁয়া পরিবেশে মিশে দূষন ঘটায়।
অপরদিকে, সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি ইত্যাদি শক্তি দ্বারা কোনো রকমভাবে বায়ু দূষিত হয় না।
💦সম্পদ নিঃশেষিত হওয়ার সম্ভাবনাঃ প্রচলিত শক্তির সঞ্চয় সীমিত হওয়ার কারণে সম্পদ দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে সম্পদ নিঃশেষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বর্তমানে পৃথিবীতে কয়লা প্রায় নিঃশেষিত হয়ে এসেছে, যা সঞ্চিত আছে তা দিয়ে আর মাত্র চার দশক চলতে পারে।
অপরদিকে, অপ্রচলিত শক্তির শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, এর জোগান অফুরন্ত(সূর্যকিরণ,বায়ু)।
💦সম্পদের জোগানঃ প্রচলিত শক্তির উৎস গুলি গচ্ছিত সম্পদ, তাই এই শক্তি সীমিত।যেমন- খনিজ তেল, কয়লা ইত্যাদি একদিন ফুরিয়ে যাবে।
অপ্রচলিত শক্তির উৎস গুলি প্রবহমান সম্পদ, এগুলির জোগান অসীম। যেমন- বায়ু, সূর্যকিরণ ইত্যাদি।
৩। সম্পদ সংরক্ষনের সম্ভাব্য উপায়গুলি লেখ।
উত্তরঃ
💦সংজ্ঞাঃ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পূরণ ও দীর্ঘস্থায়ী উন্নতির উদ্দেশ্যে প্রাকৃতিক সম্পদকে মিতব্যয়ীভাবে, যথোপযুক্ত ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যবহার, অপচয়রোধ, রক্ষণাবেক্ষণ ও দূষনের কবল থেকে রক্ষা করাকে সম্পদ সংরক্ষন বলে।
অধ্যাপক জিম্যারম্যান【Zimmermann】 বলেছেন যে, ভাবী প্রজন্মের জন্য ভোগের নিয়ন্ত্রনকে সংরক্ষন বলে।
💦সম্পদের প্রকৃতি, প্রয়োজন, প্রয়োগ,চাহিদা, পরিবেশ অনু্যায়ী সম্পদ সংরক্ষণের পদ্ধতি বিভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে। যেমন ——-
⃟ সম্পদের অপচয় বা ধ্বংস রোধঃ সম্পদ সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল এর অপচয় রোধ করা। সম্পদ উৎপাদনের সময় এর একটা বড়ো অংশ অপচয় হয়ে যায়। যেমন- তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলে প্রকৃতপক্ষে কয়লা বা খনিজ তেলের অপচয় ঘটে।
⃟ প্রবহমান সম্পদের ব্যবহার বৃদ্ধিঃ সঞ্চিত বা গচ্ছিত সম্পদের পরির্বতে প্রবহমান সম্পদের ব্যবহার করলে সম্পদ সংরক্ষন করা যায়। যেমন- বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা ব্যবহারের পরির্বতে সৌরশক্তি, জলপ্রবাহ, বাতাস, ভূতাপ শক্তি প্রভৃতি প্রবহমান সম্পদ ব্যবহার করলে গচ্ছিত সম্পদ সংরক্ষন করা যায়।
⃟ সম্পদের উৎপাদন ও ভোগের মধ্যে সমতা রাখাঃ কোনো সম্পদের সামগ্রিক উৎপাদনের তুলনায় যদি তার ব্যবহারের পরিমান বেশী হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই ওই নির্দিষ্ট সম্পদের পরিমান নিঃশেষিত হতে থাকবে।
যেমন- কাষ্ঠ সম্পদের ব্যবহার বৃদ্ধি ও নতুন বনভূমির সৃষ্টির পরিমান কম হওয়ার ফলে পৃথিবীতে বনভূমির পরিমান ক্রমশ কমে যাচ্ছে। এই কারণে সম্পদের উৎপাদন ও তার ব্যবহারের মধ্যে সমতা থাকা প্রয়োজন।
⃟ বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহারঃ উন্নত প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞান ব্যবহার করে সম্পদ ব্যবহার করলে সম্পদ সংরক্ষন করা সম্ভব। যেমন- বর্তমানে জাপান, ফ্রান্স, ইতালিতে গাড়ি তৈরির কৌশল পরিবর্তন করা হচ্ছে খনিজ তেল, ডিজেল প্রভৃতি সম্পদকে সংরক্ষন করার জন্য।
⃟ সচেতনতা বৃদ্ধিঃ সম্পদ সংরক্ষনে মানুষের মধ্যে সচেতনতা আনার মাধ্যমে সম্পদ সংরক্ষন করা সম্ভব। এটি সম্পদ সংরক্ষনের একটি গূরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেমন – সরকারি বার্তার মাধ্যমে জনগনের কাছে পৌছানো বা বর্তমানের জনপ্রিয় সোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে জনগনকে সচেতন করা।
এছাড়াও আরও সম্ভাব্য উপায় উল্লেখ করা যায়, যেমন- পরিকল্পনামাফিক আমদানির মাধ্যমে সম্পদ সংরক্ষন, গচ্ছিত সম্পদের পরিকল্পনামাফিক ব্যবহার, সম্পদ সংরক্ষনে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহন,নতুন আইন প্রনয়ন করে সম্পদ সংরক্ষন ইত্যাদি।